সমস্যা যখন চুলপড়া
চুল কেন পড়ে? এ প্রশ্ন আমাদের প্রায় সবার। চুলপড়া রোধে সারা বিশ্বে বছরে প্রায় এক বিলিয়নেরও বেশি ডলার খরচ হয়। গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত। বাবা কিংবা মা অথবা দুজনের কাছ থেকে আগত জিনই নির্ধারণ করে দেয় কখন আমাদের চুল পড়বে। এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া এবং অ্যানড্রোজেন অর্থাৎ পুরুষদের হরমোন এ সমস্যার জন্য দায়ী। গবেষকদের মতে, চুল পড়ার জন্য চুলের গোড়ার বা ফলিকলে একটি এনজাইম তৈরি হয়, যার নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ। এই এনজাইম রক্তের হরমোন টেসটোসটেরনকে ডাই হাইপ্রোটেস্টস্টেরনে পরিণত করে। যার আরেক নাম ডিএইচটি। ডিএইচটি চুলের গোড়ায় আক্রমণ করে এবং চুল দুর্বল করে ফেলে। ফলে চুল ঝরে পড়ে। পুরুষদের চুল সাধারণত সামনের দিকে পড়ে এবং টাকে পরিণত হয়। মহিলাদের পুরো মাথার চুলই একইভাবে পড়ে এবং পাতলা হয়ে যায়। মহিলাদের শরীরে অ্যারোমাটেজ নামে এক প্রকার এনজাইম তৈরি হয় যা ডিএইচটিকে ইস্ট্রোজেনে পরিণত করে। এতে কিছু হলেও মহিলাদের চুল রক্ষা পায়। চুল পড়ার রাসায়নিক কারণ খুবই জটিল। চুলপড়া রোধে এবং নতুন চুল গজানোর জন্য মাথায় অনেক সময় নানারকম ভিটামিন ও ভেষজ নির্যাসযুক্ত তেল দেওয়া হয়। এ ছাড়া ড্রাকোনিয়ান পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে চুলের গোড়ায় মৃদু ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। এতে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। কিছু কিছু শ্যাম্পু ও জেল ব্যবহারে চুল ঘন দেখায়।
নানা ভেষজ গুণসম্পন্ন এসব দ্রব্য চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি চুলের জৌলুস বাড়িয়ে দেখতে ভালো দেখায়। প্রতি একদিন অন্তর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলা দরকার। অবশ্যই সেই শ্যাম্পু দিয়ে যা আপনার চুলের জন্য উপযোগী। বন্ধু-বান্ধবের কথায় মুগ্ধ না হয়ে নিজের উপযোগী শ্যাম্পু চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়াই ভালো। ভেজা চুল বেশি আঁঁচড়ানোর কারণে এবং ঘষাঘষির কারণেও চুল বেশি পড়তে পারে। এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া দরকার। মানসিক চাপ এবং অন্যান্য ওষুধ গ্রহণের ফলে চুল ঝরে যাচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে লক্ষ্য রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কারণ প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
ডা. দিদারুল আহসান, ত্বক ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা।
No comments