Header Ads

অসময়ে চুল পড়ার কারণ

চুল হলো ত্বকে অবস্থিত ফলিকল থেকে উৎপন্ন চিকন লম্বা সুতার মতো প্রোটিন তন্তু। শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে পাওয়া যায় বলে চুল স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি নির্দেশক বৈশিষ্ট্য। চুলের প্রধান উপাদান হচ্ছে কেরাটিন। চুল ঝরে পড়া সম্পর্কে আলোচনার আগে মানুষের মাথার চুল নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। মানব দেহে মাথার চুল প্রতিনিয়ত চক্রাকারে বৃদ্ধি লাভ করে ও ঝরে পড়ে। চক্রাকার বৃদ্ধির মানে হলো এনাজেন হেয়ার বা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত চুল, কেটাজেন বা মধ্যবস্থা চুল এবং টেলোজেন বা স্থিতাবস্থা চুল। মাথার ৮৫%-৯০% চুল এনাজেন পর্যায় থাকে এবং এনাজেন চুলের স্থায়িত্ব প্রায় তিন বছর। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষের মাথায় এক লাখ চুল থাকে। প্রতিদিন চুল বৃদ্ধির হার ০.৩৭ মিলিমিটার। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ১০০-১৫০ চুল পড়তে পারে, এর বেশি হলে রোগ বলা হয়।
কারণ : অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন যেমন টেস্টোস্টেরন, অ্যান্ড্রো -স্ট্রেনিডিয়ন, ডিহাই ড্রোএপিঅ্যান্ড্রোস্তেরন হরমোনগুলো সাধারণত পুরুষের বেশি ও মহিলাদের কম পরিমাণে থাকে। এ হরমোনগুলো হেয়ার ফলিকলের ওপর কাজ করে ও চুল পড়া ত্বরান্বিত করে। সে কারণে পুরুষের চুল বেশি পড়ে। তবে সবারই যে পড়বে তা নয়, যাদের এসব হরমোনের প্রভাব বেশি তাদের বেশি করে চুল পড়ে। বংশগত কারণেও চুল পড়তে পারে। পুরুষের চুল পড়া বা টাক পড়া সাধারণত ১৮ বছর থেকেই শুরু হতে পারে। এটিকে বলে মেল প্যাটার্ন অব হেয়ার লস বা পুরুষালি টাক। অর্থাৎ কপাল থেকে শুরু করে পেছন দিকে চুল উঠতে থাকে। মহিলাদের মেনোপজের সময় ও পরে অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনগুলো আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়, তখন চুল বেশি করে পড়তে শুরু করে। তবে এ ক্ষেত্রে ফিমেল প্যাটার্ন অব হেয়ার লস হয়ে থাকে। শুধু কপালের দিক থেকে নয়, চুল পড়া শুরু হয় পুরো মাথা থেকেই। ধীরে ধীরে চুলের ঘনত্ব কমে যায়। অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনই মেয়েদের চুল পড়া ও ছেলেদের টাকের সবচেয়ে বড় কারণ। দুশ্চিন্তায় ভুগলে বা মানসিক সমস্যা থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি করে চুল পড়তে পারে। তবে এ চুল পড়া সাময়িক এবং পুনরায় চুল গজায়। তবে দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে চুল পড়ে যেতে পারে। আরও বেশ কিছু কারণে চুল পড়তে পারে, যেমন : জটিল কোনো অপারেশন, দীর্ঘদিন জ্বর, হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ সেবন, খুশকি, মাথায় চর্ম রোগ ইত্যাদি।
চিকিৎসা : অনেক গবেষণার পর ফেনাস্টেরাইড আর মিনোক্সিডিল নামের দুটো ওষুধ চুল গজানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। দুটি ওষুধেরই অল্প কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। মিনোক্সিডিলের তিনটা কনসেনট্রেশন পাওয়া যায়। ২%, ৫% ও ৭.৫%। ২% মিনোক্সিডিল মেয়েদের জন্য আর ৫%, ৭.৫% মিনোক্সিডিল ছেলেদের জন্য। স্প্রে করে মাথার স্ক্যাল্পে দিতে হয়। পুরুষদের ফেনাস্টেরাইড এবং মিনোক্সিডিল এক সঙ্গে দেওয়া যায়। খুশকি এবং মাথায় চর্মরোগ হলে সঠিক চিকিৎসা করানো। লেজার থেরাপি, পিআরপি, চুল প্রতিস্থাপন ইত্যাদি দিয়ে চুল গজানো যায় অনেক ক্ষেত্রে।
ডা. তুষার সিকদার, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং কনসালটেন্ট, ট্রমা সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

No comments

Theme images by Maliketh. Powered by Blogger.